ষ্টাফ রির্পোটার ॥ চুনারুঘাটের মৃত্যুদ্ড প্রাপ্ত আসামিকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। ১৯৯৯ সালে ধারের মাত্র দুই হাজার টাকা না পেয়ে শিশু সন্তানের সামনেই তার মাকে হত্যা করা হয়। ঘটনার পর পেরিয়ে গেছে দীর্ঘ ২২ বছর। এতো দিন ধরে ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল হত্যাকারী ব্যক্তি আদম খান। অবশেষে গত মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় র্যাব। ঢাকার আশুলিয়া থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে নিজের পরিচয় গোপন করতে আদম খান জাতীয় পরিচয়পত্র পরিবর্তন করে। এরপর তিনি অবস্থান করে আশুলিয়া এলাকায়। সেখানে কখনও রাজমিস্ত্রি আবার কখনও ফল বিক্রি, আবার কখনো হকারের কাজ করতে তিনি। গতকাল বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকার কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য দেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, ১৯৯৯ সালের ৬ মে চুনারুঘাটের পাইকপাড়া ইউনিয়নের হলহলিয়া গাজীপুর গ্রামের মৃত খুটি মিয়া ওরফে ওমর খানের পুত্র আদম খান মাত্র দুই হাজার টাকার জন্য তিন বছরের শিশু সন্তান তাজউদ্দিনের সামনে ছুরি দিয়ে বিধবা মা নুরচান বেগমকে হত্যা করেন। এই হত্যাকা-ের ৭-৮ মাস আগে ভিকটিমের স্বামীর মৃত্যু হয়। মায়ের হত্যার ঘটনায় চুনারুঘাট থানায় মামলা করেন নিহতের আরেক ছেলে শফিক। সে সময় এলাকাবাসী হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করে। র্যাবের মুখপাত্র আরও বলেন, নুরচান বেগমের মৃত্যুতে তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে পিতা মাতা হারা হয়ে পরেন। আর্থিক সংকটের কারণে ভিকটিমের নিকটাত্মীয় (ফুপা) এবং এলাকাবাসীর আর্থিক সহায়তায় মামলাটি পরিচালনা করা হয়। মামলার তদন্ত শেষে সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ২০০২ সালে আদালত আদম খানকে মৃত্যুদ- প্রদান করেন।
এরপর থেকে ফাঁসির দ-প্রাপ্ত আদম খান রফিক দীর্ঘ ২২ বছর ধরে পলাতক ছিলেন। র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৯ এর একটি দল প্রযুক্তির মাধ্যমে তার অবস্থান শনাক্ত করে। পরবর্তীতে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
যে কারণে হত্যা : র্যাব জানিয়েছে, এই হত্যাকা-ের এক বছর আগে অভিযুক্ত আদম খানের কাছ থেকে নিহতের ছেলে শফিক দুই হাজার টাকা ধার নেন। এর পাঁচ মাস পর শফিকের বাবা আব্দুর রহমানের মৃত্যু হয়। এ সময় পরিবারটি অভাব-অনটনে পরে। ১৯৯৯ সালের ৩১ মে টাকা চাইতে যান আদম খান। ধারের টাকা না দেওয়ায় পরিবারকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও অপমান করেন। এ সময় ভুক্তভোগী তার তিন বছরের ছেলেকে কোলের নিয়ে ঘটনার বিষয়টি জানাতে প্রতিবেশী আছমত উল্লাহর বাড়িতে যান। সেখানেই তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে ধারালো ছুরি দিয়ে বুকের বাম পাশে আঘাত করা হয় নুরচান বেগমের। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।
যেভাবে পলাতক ছিলেন আদম:
এই হত্যাকা-ের পর তাৎক্ষণিকভাবে গ্রাম থেকে পালিয়ে সিলেট শহরে সপ্তাহখানেক অবস্থান করেন আদম। এরপর গ্রেফতার এড়াতে ঢাকার আশুলিয়ায় চলে আসেন। ২০১২ সালের মার্চ মাসে আদম খান মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভুয়া জন্মসনদ তৈরি করেন। সেই সনদপত্রের মাধ্যমে একটি এনআইডি’র জন্য আবেদন করেন। সেখানে স্থায়ী ঠিকানা দেওয়া হয় মাধবপুরে। চেহারা পরিবর্তন করার জন্য ছদ্মবেশ ধারণ করে এবং তার আসল নাম আদম খানের পরিবর্তে নিজেকে রফিক নামেই আশুলিয়ায় পরিচয় দেন। পরবর্তীতে জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে একটি এনআইডি ও স্মার্ট এনআইডি কার্ড তৈরি করেন। এরপর ধীরে ধীরে আশুলিয়ায় স্থায়ী নিবাস গড়ে তোলেন এবং ছদ্মবেশে রাজমিস্ত্রির কাজ শুরু করেন। গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত দীর্ঘ ২২ বছর নিজের গ্রামের বাড়ি যাননি তিনি। বর্তমানে সে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অচিরেই তাকে হবিগঞ্জে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি