নিজস্ব প্রতিবেদক -: গতকাল ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস ছিল।দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ নিউজ পোর্টালের সম্পাদক ও প্রকাশক,দ্যা ডেইলি মর্নিং গ্লোরী ও দৈনিক আমার হবিগঞ্জ পত্রিকার নবীগঞ্জ প্রতিনিধি, নবীগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরজুন আক্তার মনি গতকাল তার ফেইসবুক আইডিতে বিশ্ব শিক্ষক দিবসে স্মৃতিচারণ তুলে ধরেছেন তার প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ নাসির উদ্দীন ও হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক মোঃ মহসিন আহমেদ কে নিয়ে এবং বতার প্রিয় শিক্ষক গণ সহ বিশ্বের সব শিক্ষক গণ কে আন্তরিক ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন নিম্নে হুবহু তুলে ধরা হল-:
আমার ছোটবেলা বেড়ে উঠার এলাকা নবীগঞ্জের ১১ নং গজনাইপুর ইউপির কায়স্থ গ্রাম ছিল নারীবিদ্বেষীদের কারখানা।মেয়েরা সর্বোচ্চ ৫ম শ্রেণি পড়ার সুযোগ পেতো।না হলে ৩য়,৪র্থ শ্রেণিতে কোন রকম।আমার পড়াকালীন সময় আমার প্রিয় প্রধান শিক্ষক ছিলেন বয়স্ক,নাম মোঃ নাসির উদ্দীন, নবীগঞ্জের ৯ নং বাউশা ইউপির বিলপাড় গ্রামের।তাই বাচ্চাদের মনের অনুভূতি খুবই কাছ থেকে বুঝতে পারতেন।স্কুলে ভর্তির ২/৩ মাস পর বৃষ্টির দিনে পা পিছলে পড়ে স্লেট ভেঙে হাত কেটে যায়।মা কে বললাম স্লেট নিয়ে স্কুলে যাব না,আমার হাত কেটে দিয়েছে।আমাকে খাতা কলম কিনে দাও।খাতা-কলম নিয়ে স্যারের অফিসে গিয়ে বললাম,স্যার আমি চক দিয়ে লিখব না,আমার হাত কেটে গিয়েছে।স্যার বললেন,তুমি অনেক ছোট খাতা-কলম দিয়ে লিখতে পারবা না,চক দিয়ে লেখা শিখতে হয়।বললাম,স্যার আমি যদি লিখে দেখাতে পারি,আমাকে অনেক গুলো বই দিবেন?পড়েও শুনালাম,লিখেও দেখালাম।স্যার খুশি হয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির বই আমাকে দিলেন।অনেক আনন্দিত।পরীক্ষায় ১ম হলাম।তখন থেকে হিংসা শুরু।স্যারের তিন ছেলে,মেয়ে নেই,তাই আমাকে অনেক আদর করতেন।ছোট ছোট কবিতা লিখে স্যার কে শুনতাম।৪র্থ শ্রেণীতে উঠতেই মুরব্বিরা মা কে বলেন,মেয়েদের বেশি পড়াতে নেই।আমাকে স্কুলে আসতে দেওয়া হয়নি।৪/৫ দিন অপেক্ষা করে স্যার বাড়িতে গিয়ে বলেন,তাকে স্কুলে পাঠানো হয় না কেন? মা বলেন গ্রামের মানুষ মেয়েদের পড়াশোনা পছন্দ করে না।স্যার বলেন,আজ থেকে সে আমার মেয়ে,যত টাকা লাগে,আমি পড়াশোনা করাব।প্রাণে স্বস্তি ফিরে আসে।স্কুলে গিয়ে বললাম,স্যার মেয়েদের পড়ানো নিষেধ কেন?স্যার বলেন,ওদের বুদ্ধি নেই,তাই বুঝে না।বললাম স্যার আমাকে পড়াশোনা করিয়ে শিক্ষক বানিয়ে দেন প্লিজ।আমি শিক্ষক হয়ে এলাকার সব মেয়েদের আপনার মতো পড়াশোনা করাব।স্যার বললেন,আমার স্ত্রী একটি মেয়ের কাঙাল,তুমি তাকে মা বলিও এবং আমাকে বাবা।একটু লজ্জা পেলাম,বললাম স্যার আমি আস্তে আস্তে বাবা বলব,অন্যরা যেন না শুনে।প্রতিদিন অফিসে লুকিয়ে একবার বাবা ডেকে আসতাম।আরেকদিন আমার মা সহ স্যারের বাড়ি নিয়ে গেলেন।স্যার বলেন,মা ডাক।একজন মায়ের সামনে আরেকজন মা কে মা বলা কষ্ট হচ্ছিল।আমার মা বললেন,বল।তারপর আস্তে করে বলেছি মা।ক্লাসে ২য় ছাত্র ছিল প্রবাসীর ছেলে।আমাকে হারানোর জন্য দুজন শিক্ষক রেখে প্রাইভেট পড়ানো হত তাকে।স্যার ভয় পেয়ে বললেন,তুমি আমার নিকট এসে সকালে প্রাইভেট পড়বে।বললাম,স্যার ক্লাসে যা পড়ান,তা আমি সঙ্গে সঙ্গে মুখস্থ করে ফেলি।কারণ আপনাকে কবিতা লিখে দেওয়ার জন্য সবসময় দুনিয়া নিয়ে চিন্তা করি।প্রাইভেট পড়লে চিন্তা করিতে পারব না।স্যার বলেন,ঠিক আছে,তুমি কি শিখেছো তা শুধু সকালে এসে আমাকে শুনিয়ে চিন্তা করিও।বিপদে পড়লাম।সকালে গিয়ে স্যার কে বই পড়ে শুনতাম,তার মধ্যে প্রাইভেট পড়া হয়ে যেত বড় হয়ে বুঝেছি এবং আমার শ্রদ্ধেয় স্যারের জন্য ক্লাসে প্রবাসীর ছেলে হারাতে পারেনি।হাইস্কুলে ভর্তি হওয়ার পরও আমার পড়াশোনা বন্ধ করান।এক মাস স্কুলে না যাওয়ায় আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মহসিন স্যার বাড়িতে এসে মা কে বুঝিয়ে স্কুলে নেন।শ্রদ্ধেয় স্যার নাসির উদ্দীন স্যারের পরিবারের সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক।২০১১ সালে গাড়ি এক্সিডেন্ট করার কিছু দিন পরে আমার প্রিয় স্যার মারা যান।আমার জন্য অনেক কষ্ট পেয়েছেন স্যার।আল্লাহ যেন স্যার কে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন।বড় হয়ে ৪/৫ টি প্রাইভেট স্কুল দিয়ে শত ঝড়-ঝাপটা সামলিয়ে মেয়েদের কে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করে শিক্ষকের দেওয়া কথা বাস্তব করতে পেরে জীবন ধন্য মনে করি।আমার স্কুলে শুধু মেয়ে ছিল না,গরীবের ২০℅ছেলেও ছিল।আজ ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবসে আমার প্রিয় শিক্ষক গণ সহ বিশ্বের সব শিক্ষক গণের প্রতি আমার আন্তরিক ভালোবাসা শ্রদ্ধা।ভালো থাকেন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক গণ।
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি