ফরজুন আক্তার মনি, (সম্পাদক ও প্রকাশক)।।।
আগামী ১০ বছরে বাংলাদেশকে পরিপূর্ণভাবে ক্যাশলেস বা কাগুজে টাকামুক্ত হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়।
রেমিট্যান্স পাঠাতে সোনালী ব্যাংকের চালু করা ব্লেজ সার্ভিসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। ২৪ আগস্ট সন্ধ্যায় পুরো অনুষ্ঠানটি পরিচালিত হয় ডিজিটাল মাধ্যমে।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা বলেন, ‘ক্যাশলেসই ভবিষ্যৎ। এটাই ডিজিটাল বাংলাদেশের পরবর্তী স্বপ্ন।
‘ব্লেজের মাধ্যমে বিদেশ থেকে সরাসরি সাধারণ মানুষের মোবাইলে রেমিট্যান্স পৌঁছে যাবে। তিনি যেকোনো কেনাকাটার পেমেন্ট মোবাইল ফোন থেকেই করতে পারবেন। তাদের ক্যাশ হাতে রাখতে হবে না। প্রবাসীদের পাঠানো কষ্টের উপার্জন আর কেউ চুরি করতে পারবে না।’
ব্লেজ সার্ভিসের মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে প্রবাসীদের পাঠানো টাকা মাত্র পাঁচ সেকেন্ডে সরাসরি গ্রাহকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে যুক্ত হবে। এ পদ্ধতিতে টাকা পাঠানো যাবে সাত দিন ২৪ ঘণ্টা। সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে এই উদ্যোগে রয়েছে হোমপে এবং আইটিসিএল।
অনুষ্ঠানে জয় বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নজর শুধু আজকের দিকে নয়। ভবিষ্যতে কী হবে, সেদিকেও আমাদের নজর রয়েছে। এটিকে কেন্দ্র করেই আমাদের সব প্রস্তুতি। আজ থেকে ১০ বছর পর আমরা কোথায় যাব, সেটাই ডিজিটাল বাংলাদেশের ভিশন। আমাদের এখনকার স্বপ্ন হচ্ছে আমরা হব একটি ক্যাশলেস সোসাইটি।
‘আমাদের দেশের ৫ কোটি মানুষের এখনও কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই। তারা পুরোপুরি ক্যাশের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু তাদের এই টাকা তো চুরি হতে পারে। পথে অনেকেই লুটে নিতে পারে। ক্যাশ ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতির সুযোগ থাকে, কিন্তু ক্যাশলেস হয়ে গেলে এই দুর্নীতির সুযোগ বন্ধ হয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি সব ভাতা এখন ডিজিটালি দেয়া হচ্ছে। আগে যারা এসব বিতরণ করত, তাদের চুরি করার সুযোগ থাকত। আমরা সেটা বন্ধ করে দিয়েছি।
‘আজকাল ডিজিটাল যুগে কোনো লিমিটেশনের মানে নেই। এ জন্যই ব্লেজের উদ্বোধন। যেমন আমার এখানে এখন দিন কিন্তু বাংলাদেশে রাত। আমি যদি দেশে কাউকে টাকা পাঠাই, সে কিন্তু এখন সেটা পাবে না। হয়তো তাকে আরো দু-এক দিন অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু ব্লেজের মাধ্যমে টাকা পাঠালে সেটা রাত দুইটা বাজলেও পেয়ে যাবে। আর এর জন্য কোথাও যেতে হবে না।’
জয় বলেন, ‘আমিও একজন প্রবাসী, আমার হয়তো সেভাবে দেশে কোনো টাকা পাঠাতে হয়তো হয় না। আমাদের দেশের আয়ের সবচেয়ে বেশি আসে রেমিট্যান্স থেকে। এটা গার্মেন্টসের চেয়েও বেশি। প্রবাসী শ্রমিক বা ইঞ্জিনিয়ার যারা বিদেশে কাজ করেন, তারা পরিবারকে প্রতি মাসেই টাকা পাঠান। আমি বাংলাদেশ ব্যাংককে কৃতজ্ঞতা জানাই, ধন্যবাদ জানাই, তারা এই টাকা পাঠানোর পদ্ধতিটি সহজ করেছে। বিভিন্ন দেশে রেমিট্যান্স সেন্টার খুলেছে।
‘এখন যারা টাকা পাঠান, তাদের আগে ব্যাংকে বা রেমিট্যান্স সেন্টারে যেতে হয়। সেখানে ভেরিফিকেশনের পর তারা টাকা জমা দেন। আবার এসব স্থানে টাকা পাঠাতে হয় সপ্তাহে ৫ দিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টার মধ্যে। সেটা পৌঁছাতে পৌঁছাতে আরো দু-এক দিন লেগে যায়।’
সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘এখন কোভিডের কারণে ব্যাংকে বা রেমিট্যান্স সেন্টারে নানা শঙ্কা থাকে। এ পদ্ধতিতে টাকা পাঠালে সেটা থাকছে না। আমি আশা করি, সারা বিশ্বেই প্রবাসীরা এ পদ্ধতিতে টাকা পাঠাতে পারবেন। এই ব্লেজ সার্ভিসটা হবে ক্যাশলেস সোসাইটির একটি অংশ।
‘আপনারা (প্রবাসীরা) যখনই রেমিট্যান্স পাঠাতে চান, এটা ব্যবহার করুন। ভবিষ্যতের বাংলাদেশ হবে সম্পূর্ণ ডিজিটাল ও ক্যাশলেস। এটাই আগামী ১০ ও ২০ বছরের স্বপ্ন।’
তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন হচ্ছে বাংলাদেশকে উন্নত করা, এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং মানুষের জীবনকে সহজ করা। কোভিডের সময় আমরা এর সবচেয়ে বেশি সুফল পেয়েছি। এ সময় অনেক দেশের সরকার অসহায় হয়ে গেছে। সরকার পরিচালনা করতে পারেনি, স্কুল-কলেজ বন্ধ হয়ে যায়।
‘আমরা অনেক আগে থেকেই ডিজিটাল হওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছি। শুরু থেকেই বিভিন্ন সরকারি কাজে ভিডিও কনফারেন্সের ব্যবহার হয়েছে অনেক আগেই। কোভিডের আগে থেকে সিস্টেমটা ছিল।
‘আমরা ইউনিয়ন পর্যায়ে অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন করি। কোভিড হওয়ার আগে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অতটা কাজ হয়নি। কিন্তু যখন কোভিড শুরু হলো, তখন সিস্টেমটা ছিল বলে দ্রুত এই পদ্ধতিতে চলে যেতে পেরেছি। আর এ কারণে আমাদের অর্থনীতিতে কোভিডের প্রভাব তেমন একটা পড়েনি।’
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি