ষ্টাফ রিপোর্টার।।নবীগঞ্জ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ৩য় ধাপের নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলেও প্রার্থীদের জয় পরাজয় নিয়ে প্রতিটি এলাকায় নানা চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে।এছাড়াও সদ্য অনুষ্ঠিত হওয়া ইউপি নির্বাচনে দুই বিএনপি নেতার প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকে সমর্থনের বিতর্কিত ভূমিকা নিয়ে উপজেলা জুড়ে বিএনপি পরিবারের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এনিয়ে দলের মধ্যে পুরোদস্তুর হৈ ছৈ বিরাজ করার পাশাপাশি এলাকায় সমালোচনার ঝড় বইছে।
উল্লেখ্য, নবীগঞ্জ উপজেলার ১৩নং পানিউমদা ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী ইজাজুর রহমানের সাথে একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন যুবলীগ নেতা স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী (বিদ্রোহী) মহিবুল হাসান মামুন। ওই ইউনিয়নে দুই জন প্রার্থী থাকায় তাদের মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা জমে উঠে। কিন্তু এ ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী মামুনের বিজয়ের ক্ষেত্রে বাধাঁ হয়ে দাঁড়ান নবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সিনিয়র সদস্য ও পানিউমদা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি এবং উক্ত ইউনিয়নের দুই বারের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান। তিনি প্রকাশ্যে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী ইজাজুর রহমানের নৌকা প্রতিকের সমর্থনে কাজ করেন। অপর বিএনপি নেতা উপজেলার ২নং পূর্ব বড় ভাকৈর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক এবং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আশিক মিয়া আওয়ামীলীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আক্তার হোসেন ছুবার পক্ষে মাঠে কাজ করেন। উক্ত দুটি ইউনিয়নে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ছিল না। তাই দুই বিএনপি নেতার পাশাপাশি তাদের বলয়ের বড় একটি অংশ নির্বাচনে নৌকার সমর্থনে কাজ করেন। ফলে দুটি ইউনিয়নেই নৌকার বিজয় নিশ্চিত হয়েছে। নতুবা পানিউমদা ও বড় ভাকৈর (পূর্ব) ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরাই বিজয়ী হতো বলে সাধারন ভোটারদের মন্তব্যে হাটবাজার এখনো সরগরম। চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। সারাদেশের ন্যায় নবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এবার প্রার্থী মনোনয়নে আওয়ামীলীগের হিসেবে ভুল-সহ নানা কারণে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সরকার দলীয় প্রার্থীদের নৌকা প্রতিকের চরম ভরাডুবি হয়েছে নবীগঞ্জে। উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪টি ইউনিয়নে নৌকা বিজয়ী হলেও ৯ টিতে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী ও বিএনপি ঘরানার স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন । তন্মধ্যে ৫টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিজয় লাভ করেন তারা হলেন ১নং বড়ভাকৈর (পশ্চিম) ইউনিয়নে রঙ্গলাল দাশ, ৩নং ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নে নোমান হোসেন, ৭নং করগাঁও ইউনিয়নে নির্মলেন্দু দাশ রানা, ১১নং গজনাইপুর ইউনিয়নে ইমদাদুর রহমান মুকুল, ১২নং কালিয়ারভাংগা ইউনিয়নে ইমদাদুল হক চৌধুরী এবং বাউসা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হাজী শেখ সাদিকুর রহমান (শিশু) ও দীঘলবাক ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোঃ ছালিক মিয়া স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন। কুর্শী ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ খালেদুর রহমান খালেদ এবং দেবপাড়া ইউনিয়নে শাহ নিয়াজ নাদির সুমন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান হিসেবে বিজয় লাভ করেন। এদিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আউশকান্দি ইউনিয়নে দিলাওর হোসেন ও নবীগঞ্জ সদর ইউনিয়নে হাবিবুর রহমান হাবিব, ১৩নং পানিউমদা ইজাজুর রহমান ও ২নং বড় ভাকৈর (পূর্ব) ইউনিয়নে আক্তার হোসেন ছুবা বিজয়ী হন। অপরদিকে বিএনপি নেতা আব্দুর রহমান ১৩নং পানিউমদা ইউনিয়নে ও আশিক মিয়া বড় ভাকৈর (পূর্ব) ইউনিয়নে নৌকার পক্ষে প্রচার প্রচারণায় অংশ না নিলে এ দু’টি ইউনিয়নে নৌকার মাঝিদের পরাজয়ের সম্ভাবনা ছিল শতভাগ। উল্লেখিত ইউনিয়নে বিএনপি নেতা সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান ও বিএনপি নেতা আশিক মিয়া চেয়ারম্যান গংরা নৌকার পক্ষে কাজ করার কারণে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ইজাজুর রহমান ও আক্তার হোসেন ছুবা বিজয় লাভ করেন। দুই নেতার এমন ভূমিকায় বিএনপি পরিবারের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার পাশাপাশি তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে রীতিমতো হৈ ছৈ শুরু হয়েছে। ভেঙ্গে যেতে বসেছে নবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির শক্তিশালী সাংগঠনিক কাঠামো। দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি জানান। এব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মোঃ মুজিবুর রহমান চৌধুরী শেফুর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, স্থানীয় নির্বাচনে ব্যক্তিকে পছন্দ করে সিদ্ধান্ত নেন অনেকেই। তবে তারা ইউপি নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করেছেন বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে অবগত নই।
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি