নবীগঞ্জ প্রতিনিধি।। নবীগঞ্জ উপজেলা যুবদলের ৪৬ সদস্য বিশিষ্ট নব-গঠিত কমিটির অনুমোদনকে
কেন্দ্র করে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটিতে ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমুল্যায়ন, মাঠের তৃণমূলের কর্মীদের বঞ্চিত করে অনেক প্রবাসীদের কমিটিতে স্থান দেয়াসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত গঠিত আহবায়ক কমিটি থেকে ৬ জন যুগ্ম আহ্বায়ক ও সিনিয়র সদস্য সহ ১৫ জন সদস্য পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগকারী নেতৃবৃন্দরা ইতিমধ্যে তাদের পদত্যাগ পত্র দলের কেন্দ্রীয় ও সিলেট বিভাগীয় টিম এবং জেলা যুবদলের সভাপতি/ সাধারন সম্পাদক বরাবরে প্রেরন করেছেন। ফলে, গঠিত কমিটি থেকে পদত্যাগের হিড়িকে কমিটির নেতৃত্ব অনেকটা প্রশ্নবিদ্ধতার পাশাপাশি কমিটির বৈধতা নিয়েও রাজনৈতিক
অঙ্গনে কানাঘুষাসহ নানা আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে। এছাড়া গঠিত যুবদলের কমিটির এই বিভক্তিকে কেন্দ্র করে নবীগঞ্জ শহরজুড়ে যুবদলের নেতাকর্মীদের মাঝে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন মুর্হুতে দু’ গ্রুপের মাঝে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হওয়ার আশংকা রয়েছে বলে মনে করেন নবীগঞ্জের রাজনৈতিক সচেতন মহল।
দলীয় ও বিভিন্ন সুত্রে জানাযায়, গত ১৩ জানুয়ারী জাতীয়তাবাদী যুবদল নবীগঞ্জ উপজেলা শাখার ৪৬ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি প্রকাশ করেন জেলা
যুবদল। সাবেক ছাত্রনেতা মোশাহিদ আলম মোরাদকে আহ্বায়ক ও
সাবেক ছাত্রনেতা অলিউর রহমান অলিকে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এবং সাবেক ছাত্রনেতা রায়েছ চৌধুরীকে সদস্য সচিব করে নব-গঠিত কমিটিতে ১৬ জনকে যুগ্মকে আহ্বায়ক করে ৪৬ সদস্য
বিশিষ্ট কমিটি প্রকাশ করেন জেলা যুবদল। উক্ত কমিটি প্রকাশিত হওয়ার সাথে
সাথে গঠিত কমিটির ৩, ৪, ৫, ১০, ১৪, ১৫ নং যুগ্ম আহ্বায়ক ও কমিটির সিনিয়র
সদস্যসহ উপজেলা জুড়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। গঠিত কমিটির প্রতিবাদে তাৎক্ষনিকভাবে ঘোষিত কমিটির যুগ্ম আহবায়ক জয়নাল আবেদীন জয়নাল ও যুগ্ম আহবায়ক সাবেক ছাত্রনেতা ফোয়াদ হাসান রাজন এবং সিনিয়র সদস্যদের যৌথ নেতৃত্বে জরুরী বৈঠকে বসেন।বৈঠকে ঘোষিত কমিটির নানা অনিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা শেষে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন নেতৃবৃন্দ। বৈঠকে পদত্যাগী নেতৃবৃন্দরা বলেন, উক্ত কমিটিতে ত্যাগী ও সিনিয়র নেতাকর্মীদের অবমুল্যায়ন করে প্রবাসী ও জুনিয়র নেতাকর্মীদের মুল্যায়ন করা হয়েছে। এছাড়া প্রবাসে থাকা দলের নেতাদের তদবীর এবং অনৈতিক আর্থিক
লেনদেন এর কারণে সংগঠনের ত্যাগী ও রাজপথের ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে তাদের বলয়ের লোকদিয়ে মনগড়াভাবে কমিটি ঘোষনা দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। এর প্রতিবাদে একযোগে নব
গঠিত যুবদলের কমিটি থেকে ৩নং যুগ্ম আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন জয়নাল, ৪ নং
যুগ্ম আহ্বায়ক আল আমিন, ৫নং যুগ্ম আহ্বায়ক সাবেক ছাত্রদল নেতা ফোয়াদ হাসান রাজন, ১০নং যুগ্ম আহ্বায়ক রায়হান বারী, ১৪ যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ
লিমন মিয়া, ১৫ নং যুগ্ম আহ্বায়ক মহসিন তালুকদার, সিনিয়র সদস্য জাহাঙ্গীর
চৌধুরী, সিনিয়র সদস্য ও সাবেক ছাত্রদলের সভাপতি মোঃ হারুনুর রশীদ হারুন, সিনিয়র সদস্য
সাবেক যুবদল নেতা শাহেদুল ইসলাম চৌধুরী রিপন, মোঃ মনির চৌধুরী, কুহিন চৌধুরী,
বাছিতুর রহমান চৌধুরী, জাকির হোসেন, সাবেক ছাত্রনেতা রুহুল আমীন শমসের ও আঃ রউফ রুবেল
ঘোষিত কমিটির পদ-পদবী থেকে পদত্যাগ করেন। পদত্যাগ পত্র রবিবার (১৬ জানুয়ারী)
হবিগঞ্জ জেলা যুবদলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি, সাধারন সম্পাদক বরাবরে
প্রেরন করেছেন।পদত্যাগ পত্রের অনুলিপি প্রদান করেছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি, সাধারন সম্পাদকসহ সিলেট বিভাগীয় টিমের নিকট। ৪৬ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি থেকে ৬
যুগ্ম আহ্বায়কসহ ১৫ জন সদস্য পদত্যাগ করায় নতুন কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন
উঠেছে। পদত্যাগকারী নেতৃবৃন্দরা তাদের পদত্যাগের ৭টি কারন উল্লেখ্য করেছেন।
যথাক্রমে যুবদলের দীর্ঘদিনের রাজপথের পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের বঞ্চিত করে
সদ্য ছাত্রদল থেকে আসা জুনিয়র নেতাকর্মীদের কমিটিতে আহবায়কসহ গুরুত্বপুর্ণ পদে
পদায়ন করা, কমিটিতে সিনিয়র জুনিয়র সমন্বয় না করে সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে
অবজ্ঞা ও অবমুল্যায়ন করা। প্রবাসে থাকা লোকদের কমিটিতে অর্ন্তভুক্তি করা,
মরহুম নেতা জেলা যুবদল সভাপতি মিয়া মোঃ ইলিয়াছ জীবিত থাকাবস্থায় প্রণয়নকৃত তালিকাকে
পাশ কাটিয়ে তার মৃত্যুর পর কমিটির সদস্য বৃদ্ধি ও রদবদল করা,
ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমুল্যায়ন করে অযোগ্য ও অপরিচিত লোকদের স্থান দেয়া।
যারা যুবদলের কমিটিতে সদস্য অন্তর্ভূক্ত হওয়ার জন্য আবেদন করেছেন তাদের অনেক কে যুগ্ম আহ্বায়ক
হিসেবেও স্থান দেয়া হয়েছে কমিটিতে।প্রবাসী নেতাদের তদবীর ও অবৈধভাবে আর্থিক লেনদেন এর মাধ্যমে তাদের পছন্দ মতো
কমিটি গঠন করা হয়েছে। এদিকে পদত্যাগকারী নেতাকর্মীরা প্রকাশিত কমিটি বাতিল
করে ত্যাগী নেতাকর্মীদের মুল্যায়ন করে নতুন করে আবারও কমিটি গঠনের জোর দাবী জানান।
অন্যতায় গঠিত কমিটির নেতৃত্বে সদস্যদের মাঠে নামতে দিবেন না বলেও কঠোর হুশিয়ারী দেন পদত্যাগী নেতৃবৃন্দ।
ফলে যুবদলের রাজনীতিতে উত্তোপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে
নবীগঞ্জ শহরজুড়ে। এছাড়াও নতুন কমিটির বাহিরেও ত্যাগী অনেক নেতাকর্মীরা বাদ পড়ায়
তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় বইছে উপজেলা জুড়ে। জরুরী ভিত্তিতে জেলা বা কেন্দ্রীয় যুবদল
হস্তক্ষেপ না করলে যে কোন সময় সংঘাত সংঘর্ষ রূপ নিতে পারে বলে মনে করেন নবীগঞ্জের রাজনৈতিক
সচেতন মহল।
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি