ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছে বহু মানুষ। শুধু সামরিক বাহিনীর সদস্যই না, এই সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছে ইউক্রেনের অনেক বেসমরিক মানুষও। রাশিয়ার নির্বিচার হামলায় স্ত্রী ও দুই সন্তান হারিয়ে বিধ্বস্ত ইউক্রেনের ইরপিন শহরের বাসিন্দা সেরহি পেরেবিনস। এখন তিনি ছাড়া তার পরিবারের আর কেউ বেঁচে নেই। সব হারিয়ে বিধ্বস্ত সেরহি ফেসবুকে তার দুঃখের গল্প শেয়ার করেছেন। পোস্ট করেছেন পরিবারের হারানো সদস্যদের ছবি। কিন্তু তিনি কোনোভাবেই নিজেকে ক্ষমা করতে পারছেন না। রুশ হামলা থেকে পরিবারকে রক্ষা করতে না পারার জন্য নিজেকে অপরাধী মনে করছেন তিনি।
ইয়াহু নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়,, ইরপিন শহরে রাশিয়ার যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর শহর ত্যাগের চেষ্টা করছিলেন সেরহি ও তার পরিবার। কিন্তু তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নির্বিচারে হামলা চালিয়ে হত্যা করেছে রুশ বাহিনী।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ত্রী তাতিয়ানা পেরেবিনিস ও দুই সন্তানের ছবি পোস্ট করেছেন সেরহি। তার ৯ বছরের মেয়ে নিকিতা ও ১৮ বছরের ছেলে এলিসও রুশ সেনাদের হামলায় মারা গেছে। ফেসবুকে নিজেদের দু’টি কুকুরের ছবিও পোস্ট করেছেন সেরহি। ওই হামলায় একটি কুকুর মারা যায়।
৬ই মার্চ শহর ছাড়ার চেষ্টা করছিলেন সেরহি ও তার পরিবার। এর আগে রাশিয়ার বাহিনীর হাতে অবরুদ্ধ হয়েছিল সেটি। দিন রাত চারদিকে শুধু গোলা পড়েছে। তাই যুদ্ধবিরতির আশ্বাস পেয়ে জীবন বাঁচাতে শহর ছাড়ার চেষ্টা করেন তারা। কিন্তু পথেই তাদের ওপরে বৃষ্টির মতো গুলি ছুঁড়ে রুশ সেনারা। এখন রাস্তার পাশে তাদের মরদেহের ছবি বিশ্বজুড়ে ইউক্রেন যুদ্ধের ভয়াবহতা প্রচার করছে। বিশ্ব এখন দেখছে, পুতিনের মানবিক করিডোর মিথ্যা ছাড়া কিছুই নয়।
ইরপিন থেকে যেসব ফুটেজ দেখা গেছে, তাতে এটি স্পষ্ট যে রুশ বাহিনী নির্বিচারে বেসামরিক এলাকায় গুলি ছুড়েছে। যদিও রাশিয়ার তরফ থেকে বার বার এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করা হচ্ছে।
এর আগে দনেৎস্কের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় থাকতো ওই পরিবারটি। কিন্তু ৪ বছর পূর্বে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের কাছাকাছি থাকা ইরপিন শহরে থাকার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। সেখানেই আজীবন থাকবে ঠিক করে সব গুছিয়ে নিয়েছিল সেরহি। কিন্তু রাশিয়ার হামলায় সব স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেছে। ফেসবুকে সেরহি তার স্ত্রীর উদ্দেশে লিখেছেন, আমি অবশ্যই আরেকবার তোমাকে দেখবো। আমাকে মাফ করে দিও।
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি