ফরজুন আক্তার মনি, (সম্পাদক ও প্রকাশক)।।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা পর বাঙালি জাতির হাল যাতে আর কেউ না ধরতে পারে সেজন্য তেশরা নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে কারান্তরীণ অবস্থায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বাংলার ইতিহাসে যখন রাজনৈতিক দুর্ভিক্ষ চলছিল তখন ১৯৮১ সালে বাংলাদেশে ফিরে এসে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নিয়ে সংগঠনকে সুসংগঠিত করেন এবং গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সকল রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে সারাদেশে আন্দোলন সংগ্রামের আহবান করেন যার ধারাবাহিকতায় স্বৈরশাসক এরশাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য আন্দোলন তখন তুঙ্গে। ২৭ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করা হয়েছিল।
সে হরতালবিরোধী বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্ব দিতে কালীগঞ্জের জনগণকে সাথে নিয়ে রাজপথে নামেন ময়েজউদ্দিনক। কিন্তু ঘাতকরা বোমা ফাটিয়ে মিছিল ছত্রভঙ্গ করে আমার পিতার পেটে, বুকে ও কাঁধের বিভিম্ন জায়গায় ধারালো কিরিচের সাহায্যে একের পর এক আঘাত করে এবং নির্মমভাবে হত্যা করে। হত্যাকান্ডটি হয় কালীগঞ্জ বাজারের পাশে অবস্থিত আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে। সেখান থেকে থানা মাত্র দেড়শ’ গজ দূরে। অথচ সেদিন পুলিশের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। কালীগঞ্জ স্কুল মাঠে তার মৃতদেহ জানাজার জন্য নেওয়া হলে হাজার হাজার লোক মিছিলসহ সেখানে উপস্থিত হয়।
ময়েজউদ্দিন হত্যা মামলা: ১৯৮৪ সালের ১৮ অক্টোবর ১৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়। বিচার শুরু হয় গাজীপুর দায়রা জজ আদালতে। কিন্তু এই আদালত নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায় ময়েজউদ্দিনের পরিবার ও সাক্ষীদের নিরাপত্তার দাবিতে ঢাকা দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তরিত হয়। শুরু হলো মামলার বিচার কার্যক্রম। প্রধান আসামী আজম খানরা মনে করেছিলেন তারা খালাস পাবেন। বিচারক রায় ঘোষণা করে এজলাস ত্যাগ করার সঙ্গে সঙ্গে জজ আদালত প্রাঙ্গণে ঘটে এক নারকীয় ধ্বংসলীলা। প্রচন্ড শব্দে বোমার বিস্ম্ফোরণ ঘটে। বোমার শব্দে পুরো আদালত এলাকা কেঁপে ওঠে। বোমার আঘাতে আইনজীবী, পুলিশ, সাংবাদিকসহ শতাধিক আহত হন। বোমার আঘাতে পিরোজপুরের আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও পিরোজপুর রেড ক্রসের সাধারণ সম্পাদক ধীরেন দত্তের এক পা উড়ে যায়। গুরুতর আহত ২৫ জনকে ন্যাশনাল হাসপাতাল ও মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে এই প্রথম আদালতের মতো পবিত্র জায়গায় বোমাবাজির ঘটনা ঘটল।
শহীদ ময়েজউদ্দিনের পরিবার ও দেশের মানুষ এই রায়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না। তাই আসামিদের ফাঁসির দাবি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন। দেশের মানুষকে হতবাক করে আপিল চলাকালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মুহম্মদ এরশাদ আসামিদের ক্ষমা করে দেন। স্বঘোষিত খুনি রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পেয়ে খালাস হয়ে যান। স্বৈরশাসক খুনিদের ক্ষমা করে ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সংযোজন করেন।
আপিল চলাকালে কোনো দোষী ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করতে পারেন না।
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি