নাজনীন নাবিলা, ঢাকা থেকে।।
নিজেদের সৌভাগ্যবান মনে করছেন ইউক্রেনের যুদ্ধে আটকা পড়া থেকে মুক্তি পাওয়া বাংলা সমৃদ্ধির নাবিকরা। তারা আজ সুস্থভাবে দেশে ফিরে এসেছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন তারা।
একই সঙ্গে সহকর্মী ও জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমানের মৃত্যুতে গভীর সমবেদনা জানান ফিরে আসা নাবিকরা।
আজ বুধবার দুপুরে টার্কিশ এয়ারের একটি বিমানে ঢাকার হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে নামে বাংলার সমৃদ্ধির ২৮ নাবিক। এরপর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জাহাজটির মাস্টার ক্যাপ্টেন জি এম নূরে আলম।
তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, কূটনীতিকদের আন্তরিক প্রচেষ্টা আর ইউক্রেনে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে তাদের তখনকার অবস্থা সাংবাদিকদের বর্ণনা করেন মাস্টার ক্যাপ্টেন।
জি এম নূরে আলম বলেন, ‘অনেক বড় বড় দেশের জাহাজের নাবিকরা ইউক্রেন বন্দরে আটকা আছেন। তারা এখনো উদ্ধার হতে পারেননি। আমরা সৌভাগ্যবান। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় কূটনীতিকরা পরিশ্রম ও চেষ্টা করে আমাদের দেশে ফিরিয়ে এনেছেন।’
সুস্থভাবে দেশ ফিরতে পারায় তারা এবং তাদের স্বজনরা অত্যন্ত আনন্দিত বলে জানান মাস্টার ক্যাপ্টেন। প্রধানমন্ত্রীকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন এবং পোল্যান্ড, রোমানিয়া ও অস্ট্রিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস কঠোর পরিশ্রম করেছে। ফলে আমরা দ্রুত দেশে পেরেছি।’ এটা তাদের কাছে অকল্পনীয় ছিল বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) মালিকানাধীন বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজটি তুরস্ক থেকে গত ২২ ফেব্রুয়ারি রওনা দিয়ে ২৩ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে পৌঁছে। সেখান থেকে সিমেন্ট ক্লে নিয়ে ২৪ ফেব্রুয়ারি ইতালির রেভেনা বন্দরের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে ২৪ তারিখ সকালে শুরু হয়ে যায় যুদ্ধ। চ্যানেল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আটকা পড়ে জাহাজটি।
সাত দিন পর গত ২ মার্চ জাহাজটিতে রকেট হামলা হয়। এতে জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান নিহত হন। তিনি এ সময় জাহাজের ওই স্থানে ওঠে ফোনে কথা বলছিলেন।
ইউক্রেনের বন্দরে বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজে হামলার সময়ের কথা বর্ণনা করে মাস্টার ক্যাপ্টেন বলেন, ‘আমরা তখন নিয়মিত ডিউটিতে ছিলাম। বিকেলে হামলার পর জাহাজের ব্রিজে আগুন লেগে যায়। প্রথমে আমরা নিজেরা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করি এবং একসময় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।’
জি এম নূরে আলম বলেন, ‘যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আমার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেন। তিনি বিভিন্ন পরামর্শ ও সাহস দিয়েছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফোন করে আমাদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার পদক্ষেপ নেন। দেশবাসী আমাদের জন্য অনেক দোয়া করেছেন। আমরা কৃতজ্ঞ।’
তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাসহ ব্যবস্থা করে বলে জানান মাস্টার ক্যাপ্টেন। বলেন, ‘আমরা সেখানে (ইউক্রেনে) দেখেছি প্রায় ৬০ কিলোমিটার হেঁটে হেঁটে রিফিউজিরা সীমান্ত পার হচ্ছে। কিন্তু আমাদের হেঁটে পার হতে হয়নি।
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি