নাজনীন নাবিলা,ঢাকা থেকে।।
দীর্ঘ ১৭ বছর পর বরগুনা জেলা যুবলীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ। এতে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির ২৮ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
যুবলীগের কমিটিতে বিএনপি নেতার নাম!
মো. সাইফুল ইসলাম মিরাজ
সোমবার (৭ মার্চ) সকালে ঘোষিত এই কমিটির সহসভাপতি পদে স্থান পাওয়া জাহিদুল ইসলাম বাবুর বিরুদ্ধে বিএনপির ও এর অঙ্গ সংগঠনের পদধারী নেতা হিসেবে সরাসরি বিএনপির রাজনীতি করার অভিযোগ উঠেছে।
এর আগে গত বছরের ২১ ডিসেম্বর বরগুনা জেলা যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
মাল্টি-লেভেল মার্কেটিং এর নামে যুবকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের যে অভিযোগ রয়েছে এতেও জাহিদুল করিম বাবুর নাম জড়িত রয়েছে। কারণ সে সময় জাহিদুল করিম বাবু যুবকের বরগুনা শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
এছাড়াও বরগুনার জেলা প্রশাসক ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সাক্ষর জাল করে ইনসাফ নামের একটি স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার ৫৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের জন্য ২০১৮ সালে উচ্চ আদালতে রিট করা হয়। পরে আদালত না জেনে জাল কাগজ ও নথিপত্রের ভিত্তি করে স্কুলগুলো জাতীয়করণের আদেশ দেন আদালত।
পরে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে জাল-জালিয়াতি তথ্য বেরিয়ে আসে। এ সময় ইনসাফ এনজিওর শিক্ষা প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন ইসলাম বাবু। অভিযোগ রয়েছে এই জাল-জালিয়াতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন ইসলাম বাবু।
যদিও বিএনপির রাজনীতি সঙ্গে জড়িত থাকা ও জাল-জালিয়াতির অভিযোগে অস্বীকার করেছেন জাহিদুল করিম বাবু।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমান জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি এস এম নজরুল ইসলাম বলেন, জাহিদুল করিম বাবু বিএনপির সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িত ছিল। একজন সক্রিয় নেতা হিসেবে বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামে বাবুর সরাসরি অংশগ্রহণ ছিল। এজন্য তাকে ২০১৫ সালের ২৯ আগস্ট ১৫ সদস্য বিশিষ্ট অনুমোদিত বরগুনা পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির ১২ নম্বর সদস্য করেছিলাম।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বরগুনা পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. তারিকুজ্জান টিটু বলেন, মো. জাহিদুল করিম বাবুর সঙ্গে আমরা একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাজনীতি করেছি। আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আমরা একসঙ্গে মিছিল মিটিং এবং সমাবেশ করেছি। জাহিদুল করিম বাবু শ্রমিক দলের রাজনীতি করতো বলেও জানান তিনি।
শ্রমিক দলের সভাপতি মো. নাসির উদ্দিন মোল্লা বলেন, জাহিদুল করিম বাবুর সাথে আমাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। বরগুনা জেলা বিএনপির কার্যালয়ে তার আসা-যাওয়া ছিল। তবে বিএনপি কিংবা এর কোনো অঙ্গসংগঠনে বাবুর কোনো পদ আছে কিনা তা আমার জানা নেই।
জেলা তাঁতী দলের সভাপতি আবুল বাশার রিয়াজ বলেন, জাহিদুল ইসলাম বাবু জেলা শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পরবর্তীতে এ পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক ও বরগুনা পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মো. মনিরুজ্জামান জামাল বলেন, জাহিদুল করিম বাবু যুবলীগে পদ পাওয়ার আমরা বিস্মিত হয়েছি। বাবু দীর্ঘ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। সে বিএনপি এবং এর অঙ্গসংগঠনের পদধারী নেতা। ত্যাগীদের বঞ্চিত করে এমন একজন মানুষকে জেলা যুবলীগের সহসভাপতি করা অত্যন্ত দুঃখজনক। আশাকরি কেন্দ্রীয় যুবলীগ এই সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করবে।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি আব্বাস হোসেন মন্টু বলেন, জাহিদুল করিম বাবু ২০০৬ সালে শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। এরপর ২০০৭ সালে তিনি বিএনপিতে যোগদান করেন। এতে আমরা তাকে দল থেকে বহিষ্কার করি।
২০০৭ সালের পর থেকেই বাবু পদ-পদবী নিয়ে বিএনপির রাজনীতিতে সরাসরি যুক্ত ছিল এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন প্রশংসনীয় কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে সে রাস্তায় নেমে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। এমন একজন ব্যক্তিকে যুবলীগের সহসভাপতির পদ দেওয়ার বিষয়টি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। কিভাবে এটি সম্ভব, তাও বুঝতে পারছি।
এ বিষয়ে জাহিদুল করিম বাবু বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভুয়া এবং ভিত্তিহীন। এ সময় ব্যস্ততার কথা বলে তিনি ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বরিশাল বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী মাজহারুল ইসলাম বলেন, ঘোষিত কমিটির কারো বিরুদ্ধে যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে তাহলে আমরা তা অবশ্যই তদন্ত করে দেখব। তদন্তে যদি সত্যতা পাওয়া যায়, তাহলে আমরা তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি