ফরজুন আক্তার মনি, বাংলাদেশী আন্তর্জাতিক লেখিকা নিজ ভেরিফাই ফেইসবুক আইডিতে জ্ঞানী গুণীদের কথা তুলে ধরে মন্তব্যে বলেছেন এখন তো ভারতেও মুসলমানের আক্রমণের ভয়ে হিন্দুত্ববাদ জেগে উঠছে।নিম্নে লেখিকার বক্তব্য হুবহু তুলে ধরা হয়েছে –
একাত্তরের আগে ষাটের দশকে যে সব বাঙালি বুদ্ধিজীবী বা শিল্পী সাহিত্যিক পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে ভ্রমণ করতেন, সকলের অভিজ্ঞতা খুব ভাল ছিল। সকলেই বলতেন পশ্চিম পাকিস্তানের অসাম্প্রদায়িক পরিবেশ দেখে তাঁরা মুগ্ধ। বেশ কজন হিন্দু শিল্পীও পশ্চিম পাকিস্তানে বাস করতেন, এবং বেশ সম্মানও পেতেন। আজই রামেন্দু মজুমদারের চাকরিসুত্রে করাচিতে বাস করার অভিজ্ঞতা শুনছিলাম, তিনি বলছিলেন তিনি বেশ ভাল ছিলেন করাচিতে। ষাটের দশকের পূর্ব পাকিস্তানে হিন্দুরাও ততটা অসম্মানিত হননি, এখন যতটা হন। পাকিস্তান ভেঙে যাওয়ার পর পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ –দুটো দেশেই এখন সাম্প্রদায়িকতা ভয়াবহ, মৌলবাদ ভয়ঙ্কর, ধর্মান্ধতা অবিশ্বাস্য।
ভারত ভাগের পর পাকিস্তানের নেতারা বুঝতে পেরেছিলেন, দ্বিজাতিতত্ত্ব ভুল ছিল, সভ্য হতে চাইলে হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিস্টানকে এক জাতি হিসেবে মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। সাম্প্রদায়িকতা আর ধর্মান্ধতা যে ছিল না তা নয়। ছিল। কিন্তু এখনকার মতো এতটা ছিল না। আমার তো মনে হয় যদি পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকেরা পূর্ব পাকিস্তানকে শোষণ না করতো, বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা করতো, তাহলে হয়তো এত ভয়াবহ ধ্বংস দেখতে হতো না দুটো দেশকে। এই সুত্র ধরে বলবো, যদি ভারত ভাগ না হতো, তাহলে আরও বেশি অসাম্প্রদায়িক এবং ধর্মান্ধতা মুক্ত থাকতো ভারতবর্ষ। হিন্দু মুসলমানের দাঙ্গা সুস্থ রাজনীতি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যেত। অবিভক্ত স্বাধীন ভারতবর্ষ নেহরুর আদর্শে যদি চলতো, তাহলে সেক্যুলার রাষ্ট্রে সেক্যুলার শিক্ষা পেত হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিস্টান সকলে। সচেতনতা বৃদ্ধি পেত; ব্যক্তি স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা, বিজ্ঞান মনস্কতার চর্চা হতো। ধর্মান্ধতার অবসান হতো ধীরে ধীরে। দাঙ্গা হাঙ্গামা কমে যেত। এখন তো ভারতেও মুসলমানের আক্রমণের ভয়ে হিন্দুত্ববাদ জেগে উঠছে। সত্যিকার সেক্যুলারিজম উপমহাদেশ থেকে, আমার আশঙ্কা হয়, পাকাপাকিভাবেই বিদেয় হবে।
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি