নিজেস্ব প্রতিবেদক।।
মানবজীবন কখনো নিরঙ্কুশ বিপদমুক্ত ছিল না। প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়েই মানুষকে চলতে হয়। মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা, ধারা-৩ মতে, ‘প্রত্যেকের জীবনধারণ-স্বাধীনতা ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তার অধিকার রয়েছে’। তৎমতে মানুষের জীবনের নিরাপত্তাকেই সবচেয়ে বড় করে দেখা হয়। এরপর যা দাঁড়ায় তা হলো মালের নিরাপত্তা। অর্থাৎ প্রথমে মানুষের জানের নিরাপত্তা এবং পরে মালের নিরাপত্তা। নবীগঞ্জে চোরের উপদ্রব বেড়ে গেছে। গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়ি, অফিস ও দোকানে চুরির ঘটনা বেড়ে গেছে। ৩০/৪০ হাজার টাকা মুল্যের মিশুক গাড়ীর জন্য প্রাণ দিতে হয় চালকদের। উপজেলাসহ পৌর এলাকার বিভিন্ন বিল্ডিং ও বাসা থেকে চোরের দল সুকৌশলে জানালার লক কিংবা কাচ খুলে মোবাইল, টাকা-পয়সাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে যাচ্ছে। বাড়ছে মাদক আসক্তের সংখ্যা। বৃদ্ধি পাচ্ছে জুয়া খেলার আড্ডা। শহর শহরতলীর বিভিন্ন স্পটে জুয়া খেলার আড্ডা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এরমধ্যে রিক্সা, মিশুক ও সিএনজি চুরিরও ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ ৩১ আগষ্ট রাত ৮ ঘটিকার দিকে নবীগঞ্জ শহর থেকে আবিদুর রহমান (১৮) নামের মিশুক চালক গাড়ীসহ নিখোঁজ হয়। তার সন্ধ্যান না পেয়ে পরিবারের লোকজন স্থানীয় থানায় সাধারণ ডায়েরী করে। এর ৩ দিন পর ৩রা সেপ্টেম্বর দুপুরে নীরিহ মিশুক চালকের বিবস্ত্র মৃতদেহ উপজেলার সরিষপুর এলাকায় মরা কুশিয়ারা নদী থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত আবিদুর ইসলাম পৌর এলাকার কানাইপুর গ্রামের মহিবুর রহমান পাতা মিয়ার ছেলে। ঘটনার ১৫ দিনেও মুল মুটিভ উদঘাটিত হয়নি। যদিও সন্দেহভাজন ২ জনকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরন করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আইনশৃংখলা বাহিনী প্রানপণ চেষ্টা করেও ঘটনার মুল রহস্য উদঘাটন করতে পারেন নি। চালকের মৃত দেহ উদ্ধার হলেও তার সাথে থাকা মিশুক গাড়ীর কোন হদিছ পাওয়া যায়নি। এর আগে ৩১ আগষ্ট সকালে জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরধরে চাচাতো ভাই-ভাতিজাদের হাতে খুন হন এক মায়ের এক সন্তান কামাল হোসেন নামের এক ব্যক্তি। নিহত কামাল হোসেন উপজেলার আমড়াখাইর গ্রামের মৃত আব্দুল হেকিমের ছেলে। ৫৪ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ওই গ্রামে জমিজমা ও দখল-বেদখল নিয়ে বিরোধের বিষয়টি অবগত থাকার পরও হত্যাকান্ডের ঘটনাটি সংঘটিত হয়। এক্ষেত্রে হয়তোবা কিছু করার নেই বা ছিলনা। কিন্তু অদ্যাবধি পর্যন্ত আসামীরা অধরা। শহরের ওসমানী রোড, রুদ্রগ্রাম রোড, শিবপাশাসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মাদকের বেচাকেনা ও সেবন বৃদ্ধি পেয়েছে। বেড়েছে মোবাইল চুরি। আমাদের সমাজে থানা পুলিশের গুরুত্ব এতটাই বেশি, প্রতিনিয়ত প্রতিটি ক্ষেত্রে পুলিশের প্রয়োজন পড়ে। চোর-ডাকাতের হানা, স্বামী-স্ত্রীতে বিবাদ, মহল্লায় দাঙ্গা-হাঙ্গামা সব কিছুতে পুলিশ ডাকতে হয়। এ ক্ষেত্রে কাজের কাজ কতটুকু হচ্ছে, তা বলা মুশকিল। পর্যাপ্ত লোকবল, পরিবহন সমস্যা তো আছেই। তবে এটাও বাস্তব যে কোন পরিস্থিতিতে পুলিশ আগের চেয়ে বর্তমানে অনেকটাই তৎপর। আমাদের দেশে ক্রাইম সংঘটিত হয়ার পরই আইনশৃংখলা বাহিনীর উপস্থিতি ঘটে। এ ক্ষেত্রে দাগী বা চিহ্নিত ক্রাইমার ও মাদক সেবী বা বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে আগে থেকেই ব্যবস্থা নিলে অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকতো না। এছাড়া রাজনৈতিক দল গুলোর তদবীর বন্ধ থাকা বাঞ্চনীয়। এ অবস্থায়ই যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে। আমি মনে করি পুলিশের নিয়মিত টহল জোরদার, চুরির মামলা বা ঘটনায় দ্রুত তদন্ত ও বিচার এবং থানা পুলিশের কাছে যেসব চোরদের তালিকা আছে, তা ধরে গ্রেপ্তার অভিযান, মাদক, জুয়ার আস্তানায় নিয়মিত হানা বা গ্রেফতার, অপরাধীদের সাথে আইনশৃংখলা বাহিনীর সখ্যতা থেকে বিরত থাকা, দাগী অপরাধীদের ঘটনা সংঘটিত হওয়ার আগেই আইনের আওতায় নিয়ে আসা এবং মাঝে মধ্যে ঝটিকা অভিযান চালালে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটতে পারে। এতে আইনশৃংখলা বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত রেখে স্বাধীন ভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা সরকার এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন এমনটা প্রত্যাশা সবার
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি