ষ্টাফ রিপোর্টার।বিজয়ের ৫০ বছর অতিক্রম করেছে বাংলাদেশ। অথচ এখন পর্যন্ত হবিগঞ্জের বেশিরভাগ বধ্যভূমি চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি।
যেগুলো চিহ্নিত হয়েছে সেগুলোও পড়ে আছে অযত্ন অবহেলায়। কোনোটিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করলেও অরক্ষিত থাকায় তৈরী হয়েছে বখাটেদের অভয়াশ্রমে। আবার কোথাও বধ্যভূমিতে বসেছে সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড।
বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষিত না হওয়ায় ক্ষোভ আর হতাশা প্রকাশ করছেন মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা। তাদের দাবি, জেলার সবগুলো বধ্যভূমি চিহ্নিত করে দ্রুত সংরক্ষণের।
এদিকে, বধ্যভূমি কোন পরিসংখ্যানই নেই জেলা প্রশাসনের কাছে। জেলায় বধ্যভুমির প্রকৃত সংখ্যাতো দূরের কথা, কতটি চিহ্নিত হয়েছে আর সংরক্ষিত হয়েছে কতটি সেই তথ্যই নেই তাদের কাছে।
মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুযায়ী- এ পর্যন্ত দেশে মোট ২০৯টি বধ্যভূমি ও গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে। তাদের হিসেবে হবিগঞ্জ জেলায় সন্ধান মিলেছে মাত্র একটি গণকবরের। যেটি বাহুবল উপজেলার ফয়জাবাদ হিল বধ্যভূমি।
জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্যমতে, হবিগঞ্জে অসংখ্য গণকবরের মধ্যে এখন পর্যন্ত ২০টির সন্ধান পাওয়া গেছে। এসকল বধ্যভূমি থেকে অসংখ্য মাথার খুলি, শরীরের হাড় ও চুল পাওয়া যায়।
২০টি চিহ্নিত, সংরক্ষিত ৩টি :
গ্রামবাসীর আন্তরিকতার কারণে ২০টির মধ্যে সংরক্ষিত হয়েছে মাত্র তিনটি বধ্যভূমি। সেগুলো হলো- বানিয়াচং উপজেলার মাকালকান্দি বধ্যভূমি, লাখাইয়ের কৃষ্ণপুর বধ্যভূমি ও চুনারুঘাটের লালচাঁন্দ চা বাগান বধ্যভূমি।
মাকালকান্দি ও কৃষ্ণপুর গ্রামবাসীর অভিযোগ, স্বাধিনতার পর থেকে শহীদ পরিবারের সদস্যরা বধ্যভূমিগুলোকে সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় এক পর্যায়ে গ্রামবাসী নিজেদের উদ্যোগে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে কৃষ্ণপুর বধ্যভুমি ও চলতি বছর মাকালকান্দি বধ্যভুমি সংরক্ষন করা হয়। সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন স্মৃতিস্তম্ভবও। তবে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হয়েছে।
এছাড়া বাহুবলের ফয়জাবাদ হিল বধ্যভুমিতে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করলেও সারা বছর সেটি অরক্ষিত থাকে। যে কারণে সেই বধ্যভুমি এখন বখাটেদের অভয়াশ্রম।
স্থানীয় যুবক ইমন মিয়া বলেন, ‘নির্জন এলাকায় চা বাগানের ভেতরে টিলার উপর ফয়জাবাদ হিল বধ্যভুমিটি অবস্থিত। রাতেতো দূরের কথা, দিনের বেলাও এখানে কেউ যান না। এ সুযোগে এই বধ্যভুমিটি বখাটেরা নিজেদের অভয়াশ্রম হিসেবে বেচে নিয়েছে। দিনরাত সেখানে বখাটেরা আড্ডা দেন। বসে মদ জুয়ার আসর।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি এখানে একটি সুন্দর স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেছে। এখন এর চারপাশে উঁচু বাউন্ডারি দেয়াল নির্মাণ করলেই বধ্যভুমিটি সংরক্ষণ হতো।’
অরক্ষিত যেসব বধ্যভুমি :
স্থানীয় প্রশাসন বধ্যভুমি সংরক্ষণের ব্যবস্থা না নেওয়ায় জেলার অধিকাংশ বধ্যভুমিই অযতœ অহেলায় পড়ে রয়েছে। এছাড়া অনেকগুলো বেদখল হয়ে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শায়েস্তাগঞ্জ বধ্যভুমিতে দীর্ঘদিন সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড ছিল। যদিও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচেষ্টায় ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এক বছর আগে সিএনজি স্ট্যান্ডটি বধ্যভুমি থেকে সড়ানো হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় চুনারুঘাটে পাক হানাদার বাহিনী বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষকে হত্যা করে খেয়াই নদীতে ফেলে দিত। সেই খোয়াই নদীর গতিপথ পরিবর্তন করায় পুরাতন নদী এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পরিণত হয়েছে। মুক্তযুদ্ধের স্মৃতিবিজরিত ও গণকবরের সেই নদীর অংশ এখন অনেকটাই দখল হয়ে গেছে। গড়ে উঠেছে বাসা-বাড়ি-মার্কেট। নদীর যে অংশ এখনও দখল হয়নি সেখানেও ফেলা হচ্ছে ময়লা আবর্জন।
এছাড়া চুনারুঘাটের সুরমা চা বাগান বধ্যভূমি, গাজীপুর সাগরদিঘী বধ্যভূমি, নালুয়া চা বাগান বধ্যভূমি, টেকারঘাট বধ্যভূমি, বানিয়াচং উপজেলার নজিপুর বধ্যভূমি এবং আজমিরীগঞ্জ উপজেলার জলসুখা বধ্যভূমির কোন চিহ্নই নেই।
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি